গোবিন্দ রায় ঃঃ
করোনার এই ক্রান্তিকালে নানা সমস্যা, সংকট ও অব্যবস্থাপনার কারণে বগুড়ার ধুনট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে (হাসপাতাল) চিকিৎসাসেবা চরমভাবে ভেঙে পড়েছে।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স, এক্স-রে মেশিন, এলইডি মাইক্রোস্কোপ মেশিন, জেনারেটর কাজ না করা এবং চিকিৎসক, ওষুধ ও অ্যান্টিসেপটিক দ্রবণ সংকটই এর মূল কারণ।
তবে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসা ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনার কারণে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে সাধারণ রোগীদের মধ্যে চরম হতাশা ও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। চিকিৎসাসেবা বঞ্চিতরা হাসপাতালে অব্যবস্থাপনার বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে (ফেসবুক) সমালচনার ঝড় তুলেছেন।
স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ৫০ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি তিন লাখ মানুষের বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা পাওয়ার একমাত্র ভরসা। এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহিঃর্বিভাগ ও আন্তঃবিভাগে প্রতিদিন গড়ে কমপক্ষে ৪০০ মানুষ বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করেন। কিন্ত করোনার এই ক্রান্তিকালে নানা সমস্যা সংকট ও অব্যবস্থাপনার কারণে চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বৃহৎ জনগোষ্ঠী। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দীর্ঘদিন ধরে প্রয়োজনীয় চিকিৎসক, জনবল ও নানা ধরনের ওষুধ সংকট রয়েছে।
এছাড়া অক্সিজেন, ফেরাস সালফেট, স্যাভলন ও ভায়োডিন সলিউশন নামে অ্যান্টিসেপটিক দ্রবণ নেই। এতে চিকিৎসাসেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স, এক্স-রে মেশিন ও জেনারেটরটি দীর্ঘদিন ধরে অকেজো। যক্ষ্মার জীবাণু পরীক্ষার এলইডি মাইক্রোস্কোপ যন্ত্রটি বিকল হওয়ার কারণে চিকিৎসা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ফলে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিনামূল্যে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা বাইরে থেকে টাকা খরচ করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও ওষুধ কিনছেন।
এদিকে, করোনাভাইরাসের কারণে চিকিৎসকরা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। ফলে ঠাণ্ডা-সর্দি, জ্বর-কাশির কোনো রোগীকে তারা স্পর্শ করছেন না। করোনাভাইরাস সংক্রমিত নয়। কিন্তু জ্বর, সর্দি বা কাশির সমস্যায় ভুগছেন এমন রোগীকেও চিকিৎসা দিতে অনীহা প্রকাশ করছেন। বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণের কারণে জ্বর বা শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত অনেক রোগী ফিরিয়ে দিচ্ছেন। এসব রোগীদের জেলার সরকারি হাসপাতালে রেফার করছেন।
এতে বিনা চিকিৎসায় অনেক রোগী আরো মুমূর্ষ হয়ে পড়ছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ বলেন, বর্তমানে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রস্তুতির যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। যদিও স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে বলা হচ্ছে, সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। কিন্তু তাদের কথার সাথে কাজের মিল নেই। করোনা সংক্রমণরোধে প্রস্তুতির ঘাটতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিশেষ করে অব্যবস্থাপনার কারণে করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষার ফলাফল পেতে বিলম্বের অভিযোগ রয়েছে।
ধুনট উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. হাসানুল হাছিব বলেন, চলতি অর্থ বছরে ওষুধ ও অ্যান্টিসেপটিক দ্রবণের বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। এ কারণে কিছুটা সংকট সৃষ্টি হয়েছে। তারপরও সাধ্য অনুযায়ী চিকিৎসাসেবা প্রদানের চেষ্টা করছি। অ্যাম্বুলেন্সসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। করোনা নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট পেতে বিলম্বের বিষয়টি জেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে।
ধুনট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাজিয়া সুলতানা বলেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিসাসেবার জন্য উপজেলা পরিষদ থেকে অর্থ বরাদ্দের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেই অর্থ দিয়ে অ্যাম্বুলেন্সসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি মেরামত ও অ্যান্টিসেপটিক দ্রবণ ক্রয়ের ব্যবস্থা করবেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা।
এছাড়া করোনা আক্রান্ত রোগীদের সেবার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অধিক গুরুত্ব দিতে বলা হয়েছে। কালের কণ্ঠ
Leave a Reply